“ভয়ংকর সুন্দর”

“মৃত্যু “নামক রেলগাড়িটার অপেক্ষায়, জীবনপথের শেষ স্টেশনে,অনেক জংশন অতিক্রম করে, ৩ নম্বর প্লার্টফর্মে এত মানুষের ভিড়েও কিন্তু একাই দাঁড়াতে হয়।
ইচ্ছে হয়, অচেনা এ স্টেশনে প্রিয় মানুষদের সাথে দাঁড়াতে; হাতে হাত রেখে রেলে চাপতে।
সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়,তা নিয়মবহির্ভূত!
প্রত্যেকেই, একটা সময় এসে এ প্লার্টফর্মে দাঁড়াতে হয়।
অপেক্ষা করতে হয়। অনেকটা দূর থেকেই পাওয়া যায় সে গাড়ির হুইসেল।অবশেষে, অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! রেল আসে।নিয়ে যায়। সবার গন্তব্যস্থল এক হলেও সবার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা!
যার যার ট্রেনে সে সে উঠবে। অন্যকারো ট্রেনে উঠার অনুমিতপত্র কাওকে দেওয়া হয়নি।
” মায়া” নামক শব্দের কুঝিক ঝিক- কুঝিক ঝিক আশ্চর্যজনক কাল্পনিক শব্দের তাড়নায় আচ্ছন্ন হয় মানুষ। এ শব্দ কর্ণ ফুঁড়ে মস্তিষ্কে আঘাত হানে।জগৎজুড়েই তো শুধু মায়া! মায়া,মায়া আর মায়া!পৃথিবীর মায়া,প্রিয় মানুষের মায়া।অতি তুচ্ছ বস্তুর উপরও মানুষের মায়া কাজ করে।তখন “মায়া”
নামক শব্দকে যেমন উপেক্ষা করতে মন চায়, ঠিক তেমনি সে শব্দে অভিভূত, বিভোর হতেও তীব্র ইচ্ছে করে।ইচ্ছে করে আরো কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে, পিচঢালা প্লার্টফর্মে বাদাম চিবুতে চিবুতে মানুষের আনাগোনা, অবিরাম ছুটেচলায় চোখ রাখতে।
পৃথিবীর সৌন্দর্যে চোখ ধাঁদিয়ে নিতে আর একটি বার!উত্তেজিত কন্ঠে বলতে আহা! আহা! কত্ত সুন্দর! কি আশ্চর্য!
কিন্তু সে উপায় নেই।”মৃত্যু” নামক রেলগাড়ি প্লার্টফর্মে এসে দাঁড়ালে, আলিঙ্গন করলে পরপারের, সে ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য মানুষের নাই।
যথাসময়ে, ইচ্ছেই হোক অনিচ্ছেই হোক উঠতেই হবে।ঘন্টা যে বেজে গেছে।ট্রেন আসছে। আসামাত্রই অবিলম্বে হাত রাখতে হবে রেলগাড়ির দরজার ঠান্ডা হাতলে!পা বাড়িয়ে অতিক্রম করতে হবে সিঁড়ি!
তবে এ ট্রেনে টিকিট কালেক্টর এর ভয় নেই।টিকিট আগে থেকেই যে কাটা!
উঠতেই হবে রহস্যময় ট্রেনে।এর সবটাই তো রহস্যাবৃত!এর শব্দও বিচিত্র। যাকে বলে ” ভয়ংকর সুন্দর “!
এ ট্রেনে করেই পারি জমাতে হয় না ফেরার দেশে। সে আরেক রহস্যের ভুবন!
- ফাতেমা তুন নূর