বিগ ব্যাং

আমরা সকলেই পৃথিবী নামক গ্রহে বাস করি । পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকের কাছে এখনো তা অজানা। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে অনেক তথ্য প্রকাশ করেছে । মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিস্ফোরণ কে বিগ ব্যাং তত্ত্ব বলা হয়।এই তত্ত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোনও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে একটি বিশেষ মুহূর্তে মহাবিশ্বের উদ্ভব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৭৫ কোটি বছর পূর্বে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। মহাবিশ্বের পূর্বের অবস্থা এবং বর্তমান অবস্থা আলাদা। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে গবেষণা করে নানা ধরনের তথ্যে্র সন্ধান পেয়েছেন। বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা মহাকাশে সব ধরনের তথ্য সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাই।বিজ্ঞানী এডুইন হাবল টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেন। তিনি একদিন আকাশে তার বিখ্যাত টেলিস্কোপ এর সাহায্যে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তখন তিনি দেখতে পান গ্যালাক্সি গুলো একে অপরের থেকে অনেকটা দূরে সরে আছে তখন তিনি মনে করেন যে এই গ্যালাক্সিগুলো এখন এত দূরে দূরে থাকলেও হয়তো আগে এরা অনেক কাছাকাছি ছিল। আগে মহাবিশ্ব অতি উওপ্ত ও ঘন ছিল ।সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।মহাবিস্ফোরণ শব্দটি স্থূল অর্থে প্রাচীনতম একটি বিন্দুর অতি শক্তিশালী বিস্ফোরণকে বোঝায় যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, আবার অন্যদিকে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে বিশ্বতত্ত্বে যে মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তাকেও বোঝায়।মহাবিস্ফোরণের একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল হল, বর্তমানে মহাবিশ্বের অবস্থা অতীত এবং ভবিষ্যতের অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এই তত্ত্বের মাধ্যমেই ১৯৪৮ সালে জর্জ গ্যামফ অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের অস্তিত্ব রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এটি আবিষ্কৃত হয় এবং স্থির অবস্থা তত্ত্বকে অনেকটাই বাতিল করে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়।বর্তমানে আমরা মহাবিশ্বকে যেভাবে দেখি, মহাবিশ্বের ঊষালগ্নে এর প্রকৃতি কিন্তু এরকম ছিল না, এটি ছিল অনেকটাই আলাদা। আজকের দিনে আমরা চারটি মৌলিক বলের কথা শুনতে পাই। সেগুলো হলো- সবল নিউক্লিয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল, তাড়িতচৌম্বক বল এবং মাধ্যাকর্ষণ বল। বিজ্ঞানীদের ধারনা এই চারটি বল ‘সুপার ফোর্স’ বা অতিবল হিসেবে একসাথে মিশে ছিল। সে ভাবেই ছিল তারা মহাবিস্ফোরণের ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে ১০-৪৩ সেকেন্ড পর্যন্ত। প্রথম এক সেকেন্ডেও মহাবিশ্ব ছিল যেন জ্বলন্ত এক নিউক্লিয় চুল্লি। তাপমাত্রা ছিল একশ কোটি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়েও বেশি। সেসময় কোন চেনা জানা কণা ছিল না, চারদিক পূর্ণ ছিল কেবল প্লাজমার ধোঁয়াশায়। এক সেকেন্ড পরে কোয়ার্ক, ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের মত মৌলিক কণিকাগুলি তৈরি হয়। তিন সেকেন্ড পরে প্রোটন আর নিউট্রন মিলে তৈরি হল নিউক্লিয়াস, এর পরে যথাক্রমে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, লিথিয়াম। তবে মহাবিশ্বের উদ্ভবের প্রায় কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত আমরা যাকে জড়পদার্থ বা ম্যাটার বলি সেরকম কিছুই তৈরি হয় নি। তখন আসলে রঞ্জন রশ্মি, আর বেতার তরঙ্গের মত লম্বা দৈর্ঘ্যের অতি তেজী রশ্মিগুলোই বরং পদার্থের উপর রাজত্ব করছিল। প্রায় চার লক্ষ বছর পরে তাপমাত্রা খানিকটা কমে তিন হাজার ডিগ্রি কেলভিনে নেমে আসার পরই কেবল প্লাজমা থেকে স্থায়ী অণু গঠিত হবার মত পরিবেশ তৈরি হতে পেরেছে। এসময় মহাবিশ্বের কুয়াশার চাদর ধীরে ধীরে সরে গিয়ে ক্রমশ স্বচ্ছ হয়ে আসে, পথ তৈরি হয় ফোটন কণা চলাচলের। আর তার পরই কেবল তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের উপর জড় পদার্থের আধিপত্য শুরু হয়েছে। বিগ ব্যাং তত্ত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যতেও আমরা আরো নতুন নতুন জ্ঞান লাভ করতে পারব বিজ্ঞানীরা এখনো এর ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।