নিকোলা টেসলা-The King of all Scientists

একবার আইনস্টাইন কে প্রশ্ন করা হয়েছিল,’পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি হতে কেমন লাগে?” আইনস্টাইন উত্তর দিয়েছিলেন,”এর উত্তর আমার জানা নেই।আপনি নিকোলা টেসলা কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।”
নিকোলা টেসলা
যার জন্মই ছিল রহস্যময়।প্রচন্ড প্রতিকূল আবহাওয়া ও বজ্রপাতের রাতে ১৮৫৬ সালে ৯ জুলাই এবং ১০ জুলাইয়ের মাঝে রহস্যময়ভাবে ঠিক রাত ১২ঃ০০ টায় তার জন্ম হয় ক্রায়োশিয়াতে।খারাপ ও ভয়ংকর আবহাওয়াতে জন্ম বলে মানুষ তাকে “Child of Darkness” বলেছিল কিন্তু তার মা বলেছিলেন সে একদিন পৃথিবীকে আলোকিত করবে।তাই তার মা তাকে “Child of Light ” বলতেন।
টেসলার মায়ের সেই ভবিষ্যৎ বাণী যে কতটা কার্যকর ছিল তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। Engineering পড়ার সময়ে এক শিক্ষকের সাথে তার কোনো একটা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয় পরে সে প্রতিদিন ১৮ ঘন্টা গবেষনাগারে কাজ করে প্রমাণ করেন যে তার ধারনাটি সঠিক।
১৮৮৪ সালে নিকোলা টেসলা আমেরিকায় পাড়ি জমান সাথে ছিল ৪ সেন্ট আর একটি সুপারিশপত্র।সুপারিশপত্রটি লিখেছিলেন এডিসন কে উদ্দেশ্য করে তার প্রাক্তন নিয়োগকর্তা চার্লস ব্যাচেলর। পত্রটি তে লিখা ছিল,”আমি পৃথিবীতে দুইজন জ্ঞানী লোক কে চিনি,একজন তুমি অপর জন এই যুবক।” এডিসন তার কোম্পানিতে নিকোলা টেসলাকে নিয়োগ করেন এবং ডিসি জেনারেটর পুনরায় ডিজাইন করার জন্য তাকে $৫০০০০ দেবেন বলে ঘোষনা করেন।
নিকোলা টেসলা প্রচন্ড পরিশ্রম করে সফল হন।কিন্তু এডিসন নিকোলা টেসলা কে কোনো টাকাই দেননি এবং বলেন,“It’s a joke!!” এর মাঝেই নিকোলা টেসলা আবিষ্কার করেন সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার, যা সারা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছিল, আর সেটা হলো AC বিদ্যুৎ বা Alternative Current. এডিসন এর DC বিদ্যুৎ দিয়ে মানুষ শুধু আলো পাবার চিন্তা করতো। কিন্তু নিকোলা টেসলা এর আবিষ্কৃত AC দিয়ে সব কিছু করা সম্ভব এটা মানুষ বুঝতে পারে। নিকোলা টেসলা এডিসন কে DC এর পরিবর্তে AC ব্যবহার করতে বলেন।
এডিসন এতে ক্ষিপ্ত হন এবং টেসলা তার কোম্পানি থেকে আলাদা হয়ে Tesla Electric Company নামে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এসি বিদ্যুৎ খুব শীঘ্রই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ এসি বিদ্যুৎ ছিল অত্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন, কম খরচে পাওয়া যেতো এবং শিল্প কারখানার কাজেও একমাত্র ব্যবহার উপযোগী।
পৃথিবীর কথিত শক্তি সংকট ধারণার অবসান ঘটিয়ে মানুষের জীবন আরও বেশি সাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে একজন টেসলাই যথেষ্ট ছিলেন যদিও পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা তা হতে দেয়নি। টেসলা তার সারা জীবনে কোনো আবিষ্কারের জন্যই কৃতিত্ব পাননি। বরং তার মৌলিক আবিষ্কার চুরি করে- ডিজাইন একটু এদিক সেদিক করে কিংবা সামান্য উন্নত সংস্করণ তৈরি করে অনেকেই ইতিহাসের পাতায় নাম কামিয়েছেন।
টেসলার বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার বাইরে বাকি সারা জীবন ব্যয় হয়েছে এইসব চুরি হওয়া আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়ে কোর্টে লড়াই করতে কিংবা তার বেঁচে থাকার খরচ জোগাতে।তিনি বলেন,”তারা আমার ধারণা চুরি করুক এতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি শুধু বলি,তাদের নিজেদের কোনো ধারণা আসে না কেনো?”
টেসলার হাতে ছিলো এই মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্যের চাবি।তিনি জানতেন এর গোপনীয়তার গোপনতর সূত্র।আর সে রহস্য উন্মোচনের মূলমন্ত্র ও তিনি বলে গেছেন।তিনি বলেন,”যদি তুমি ৩,৬,৯ এই সংখ্যার মাহাত্ন্য বোঝ,তো তোমার হাতে মহাবিশ্বের চাবি থাকবে।” তিনি আরও বলেন,”যদি মহাবিশ্বের রহস্য জানতে চাও,তাহলে শক্তি,কম্পন আর কম্পাঙ্কের ব্যাপারে চিন্তা করো।” মানব কল্যানে নিকোলা টেসলা 300 এর বেশি প্যাটেন্ট আবিষ্কার করেছিলেন । এছাড়াও অনেক আবিস্কারের প্যাটেন্টই গ্রহন করেননি। আর অনেক আবিষ্কারের আইডিয়া চুরি করে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা নিজের বলে চালিয়েছিল। নিকোলা টেসলা একমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি যা চিন্তা করতে তাই তৈরি করে দেখাতেন। আবিষ্কারই ছিল তার নেশা।
নিকোলা টেসলা আবিষ্কার গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আবিষ্কার হলোঃ
- AC Electricity
- Radio
- Remote,Robot
- Wireless Electricity
- Induction Motor
- Tesla coil
- Violet Ray
- TeleForce
- Neon Lamp
- Wireless Telegraphy
- Three phase Electric power
- Tesla Turbine
- Tesla valve
- Vacume Variable Capacitor
- shadowgraph
- Free Energy
- Tesla Experimental
- Tesla’s Columbus
- Resonant inductive coupling
- Polyphase system
- Rotating magnetic field
- Radio control
- Plasma globe
- Violet rayp
- Carbon button lamp
- Telegeodynamics
- Teleoperation
- Torpedo
- Vacuum variable capacitor
- VTOL
১৯৪৩ সালের ৬ই জানুয়ারিতে টেসলা বৃদ্ধ বয়সে, সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় নিউইয়র্কের এক হোটেল রুমে মারা যান। কেউ কেউ বলেন, জার্মান নাজি গুপ্তচরেরা তাকে খুন করেছিলো। অনেকে দাবি করেন যে তারা গুপ্তচরদের নামও নাকি জানেন – অটো স্করজেনি (হিটলারের সরাসরি বডি গার্ড) এবং রাইনহার্ড।
মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন, টেসলার যাবতীয় কাজকর্মের নকশা সব চলে যায় এফবিআইয়ের কাছে। যদি টেসলা এতই জিনিয়াস হয় তাহলে বিশ্ববাসী তার সম্পর্কে এত কম জানে কেন? কেন স্কুলে এডিসন, মার্কনি, কিংবা আইনস্টাইনের নামের সাথে সাথে তার নাম জানলাম না?এর কারণ টেসলা সম্পর্কে আমাদের কখনো জানতে দেয়া হয়নি।
তার আবিষ্কারগুলো ছিলো বিভিন্ন দেশের সরকারের বেশ আগ্রহের বিষয়। তার সমসাময়িক সকল বিজ্ঞানীরা তার অনন্য মেধাকে হিংসা ও ঘৃণা করতেন। কিন্তু তার কাছ থেকে আইডিয়া চুরি করতে কারো তেমন খারাপ বোধ হতো না। কিন্তু টেসলা প্রশংসা দূরে থাক, বেঁচে থাকার জন্য ভালোমতো খাবারের পয়সাই জোটাতে পারেননি।
তিনি এমনকি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- কিছু টাকাপয়সার মালিক হলে তিনি আরও নতুন নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতেন। যদি টেসলাকে বিন্দুমাত্র অনুভব করতে চান, তাহলে আপনার রুমে যান। লাইট, ফ্যান সব বন্ধ করে দিন। মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিন। ইন্টারনেট থেকে লগআউট করে কম্পিউটার শাট ডাউন করে দিন। রুমে চলতে থাকা টিভি, রেডিও সব বন্ধ করে দিন। এবার খাটে বা চেয়ারে ৫টা মিনিট চুপ
চুপ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন আর ভাবুন কেমন অনুভব করছেন? নিকোলা টেসলা ছাড়া আমাদের জীবনটাও ঠিক এমনই হতো! নিকোলা টেসলা তাই আমাদের কাছে বিজ্ঞানের জগতের ‘দ্যা ডার্ক নাইট’।