
আজ মঙ্গলবার, ১১ ই জৈষ্ঠ্য ২৫ শে মে।
আজকের এইদিনেই ১৮৯৯ সালে ভারতের চুরুলিয়া গ্রামে আসানসোল মহুকুমায়, কাজী ফকির আহমেদ ও জাহেদা খাতুনের ঘর আলো করে আসেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলাম হলেন এক বাঁধভাঙা প্রতিভা।
যিনি তাঁর কাব্যে পরাধীনতা,অমানবিকতা, অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে করেছেন হুঙ্কার। তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে শোষন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ।সাম্প্রদায়িকতা,কুসংস্কার, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন আজীবন।
তাইতো তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
তাঁর অমর লেখা এবং সুরের মূর্ছনা আজো রয়েছে বাঙ্গালীর হৃদয় জুড়ে।
বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি তিনি।
ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে কবি তাঁর কবিতায়, গানে গেয়েছেন মানবতার জয়গান।
কেবল কবিতা বা গান নয় প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোট গল্প, গজল,শ্যামা সংগীত সহ নানা ক্ষেত্রে কবির অবাধ বিচরণ।
একাধারে নজরুল কবি,সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, নাট্যকার, গীতিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সম্পাদক,সৈনিক হিসেবে প্রসিদ্ধ।
তিনি প্রায় ৩০০০ গানের স্রষ্টা। উনার গান গুলো “নজরুল সংগীত” বা “নজরুল গীতি”।
কবির রচিত বিখ্যাত কাব্যসমুহ অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি,সাম্যবাদী, সর্বহারা, সিন্ধু হিন্দোল,চক্রবাক,প্রলয় শিখা।
এমনকি তাঁর কবিতায় সুফিবাদের অনেক নিগুঢ় রহস্য ধরা দেয় বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই।বলে থাকেন সুফি কবি!!
তবে কবির ছোটবেলাটা সুখকর ছিলো না
দুঃখদুর্দশায় কাটতে থাকে তাঁর বাল্যকাল। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে কবির পরিবার যখন নিদারুণ অর্থাভাব এর সম্মুখীন তখন কবির শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সেই তুলে নিতে হয় পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব।
স্থানীয় মক্তব থেকে নিন্ম মাধ্যমিক পরিক্ষা পাশ করে মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।এবং একই সাথে মসজিদে মুয়াজ্জিন এর কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে যোগ দেন “লেটো” দলে।
সর্বশেষ আসানসোলের এক রুটির দোকানে কাজ নেন এই গুনী কবি।
১৯১৭ সালের শেষদিকে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে।সৈনিক থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন।
১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে তিনি সৈনিক জীবিন ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন।
গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের ভাগ্নি নার্গিস আসার খানের সাথে কবির বিয়ের আখত সম্পন্ন হওয়ার পরে কাবিননামায় কাজী নজরুল ইসলামকে ঘরজামাই থাকার কথা শর্ত হিসেবে দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে তিঞ্জ ঘর জামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই

কুমিল্লায় বিজরাসুন্দরীর বাড়িতে চলে যান তিনি।
সেখানেই প্রমিলা দেবীর সাথে তাঁর পরিচয় এবং পরবর্তীতে তা প্রণয় এবং বিবাহের রুপ নেয়।
তাঁদের চারটি ছেলে সন্তান।
১৯৪২ সালের দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বাকশক্তি হারান।
১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সন্মানে নিয়ে আসা হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কবি অসংখ্য, গান কবিতা,নাটক রচনার মাধ্যমে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম এর রণসংগীত “চল চল চল,ঊর্ধ্বে গগনে বাজে মাদল” ।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা সাহিত্যে অবদান স্বরুপ নজরুলকে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে এদেশের নাগরিক এর সন্মান এবং ফেব্রুয়ারীতে একুশে পদকে ভূষিত করেন।ভারত সরকার তাকে “পদ্মভূষণ ” উপাধিতে ভূষিত করেন।এছাড়াও অসংখ্য সন্মাননায় তিনি ভূষিত হন।
তিনি যেমন আল্লাহ তায়ালা এবং নূর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে রচনা করেছেন অসংখ্য গজল তেমনি ” কালীদেবী” কে লিখেছেন শ্যামা সংগিত।
এসব নানা কারনে কবিকে “কাফের” ফতুয়াও দেওয়া হয়েছে!
তিনি তাঁর শেষ ভাষণে উল্লেখ করেন, “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত ক রার চেষ্টা করেছি।”
কবির সাহিত্য জীবনের শেষদিকে শ্রেষ্ঠ অবদান কুরআন মাজিদের কাব্যানুবাদ ” কাব্য আমপারা ” উৎসর্গ করেন আলেমদেরকে।
উৎসর্গ পত্রে কবি লিখেন”বাংলার নায়েবে নবি মৌলবী সাহেবদের দস্ত মোবারকে”।
কবির শেষ জীবনে তাদের(যারা কাফের ফতুয়া দিয়েছিলেন) মতে প্রত্যাবর্তন দেখে অনেকেই তাদের “কাফের” ফতুয়া থেকে সরে আসেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগষ্ট কবি পরপারে পাড়ি জমান।জমান। আজ কবির ১২২ তম জন্মজয়ন্তীতে The Bd Daily এর পক্ষ থেকে কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।
ফাতেমা তুন নূর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি মহাবিদ্যালয়, উত্তরা,ঢাকা।
2 Comments